
রাজধানীবাসীর ছুটির দিনটা শুরু হলো ভয়াবহ আতঙ্কের মধ্য দিয়ে। ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান। ভূকম্পনের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৭। কিন্তু অনুভবটা ছিল অনেক বেশি।
উৎপত্তি স্থল নরসিংদীর মাধবদী। ভূতত্ববিদরা বলছেন, তিনটি সক্রিয় ফল্ট লাইনের ওপর অবস্থান করছে বাংলাদেশ। হিসাব বলছে, এই অঞ্চলে যেকোনো সময় হতে পারে বড় মাত্রার ভূমিকম্প। আজকের ৫.৭ মাত্রার কম্পনও তাই বড় বিপদের আগাম ইঙ্গিত হতে পারে বলেও মত তাদের।
নরসিংদী ভূতাত্ত্বিকভাবে বার্মা প্লেট ও ইন্ডিয়া প্লেটের সংযোগস্থলের মাঝামাঝি অবস্থান করায় সেখানে সহজেই ভূকম্পন সৃষ্টি হতে পারে। আজকের ভূমিকম্পও মাত্র ১০ কিলোমিটার গভীরতায় ৫.৬ মাত্রায় সংগঠিত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাবডাকশন জোনে এরইমধ্যে ৮.২ থেকে ৯.২ মাত্রার শক্তি জমা আছে, যা যেকোনো সময় মুক্তি পেলে ঘটতে পারে বড় ধরনের কম্পন।
ভূতত্ববিদ বলেন, ‘বাংলাদেশের ভেতরে সাত-এর কাছাকাছি মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে। সিলেট, শ্রীমঙ্গল, চট্টগ্রাম বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।’
অন্যদিকে নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, রাজধানীর বেশিরভাগ ভবন পূরণ করছে না ভূমিকম্প সহনশীলতার মানদণ্ড। বড় আকারের ভূমিকম্প হলে ধ্বসে পরতে পারে দেশের বেশিরভাগ ভবন। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রাম সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।
নগর পরিকল্পনাবিদ আদিলুর রহমান বলেন, ‘আমরা বার বার বলে আসছি, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ভূমিকম্পের অতি ঝুঁকিতে রয়েছে। কিন্তু পরিকল্পনা এবং ভবন নির্মাণে ঝুঁকি মাথায় রাখার বিষয়টি দেখছি না। অনেক ভবন জলাশয়-জলাভূমির ওপর বানানো হচ্ছে। ভবনগুলোর নির্মাণের মান ঠিক রয়েছে কি না এগুলোর কোনোটাই নজরদারির মধ্যে নাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাজউক তাদের সক্ষমতা বাড়ায়নি। গত ২০-৩০ বছরে যে পরিমাণ জলাশয়-জলাভূমির ওপর ভবন হয়েছে এগুলো সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকবে। ঝুঁকির মাত্রা জানার পরও রাষ্ট্র এটি নিয়ে কাজ করেনি। ভূমিকম্প হলে ভবন বা আশপাশের এলাকা নিরাপদ থাকবে তার সুযোগ নেই। এমনকি আশ্রয় নেয়ার মতো খেলার মাঠও নেই।’
এই নগর পরিকল্পনাবিদ বলেন, ‘সারা দেশে ভবন নির্মাণ যে অবস্থায় রয়েছে, এর থেকে আরেকটু বড় মাত্রার ভূমিকম্প হলে যে দুর্যোগ নেমে আসবে, তা কল্পনাতীত। আজকের ভূমিকম্পে অনেক ভবন হেলে পড়েছে। পরবর্তীতে অল্প মাত্রার ভূমিকল্প হলে এগুলো ধসে পড়তে পারে। এটা নিয়ে কাজ না করলে আমাদের ধংসযজ্ঞ ও বিপন্নতা ঠেকানো যাবে না।’
পুরান ঢাকায় ঝুকিপূর্ণ ভবন ধরে তালিকা করা হয়েছিল সেগুলো নিয়ে কাজ করা হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যার ফলাফল আমরা দেখতে পেয়েছি আজকে। নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আমাদের যে ভবনগুলো অত ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো ভেঙ্গে ফেলতে হবে। যেগুলো সংস্কার সম্ভব তা ঠিক করতে তাগাদা দিতে হবে।’
রাজধানীতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ভূমিকম্পের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘গত পাঁচ বছরে এত জোরে, এত শক্তিশালী ভূমিকম্প আমরা অনুভব করিনি। এটা বারবার আমাদের জন্য সতর্কবার্তা। এটাকে আমলে নিয়ে আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। ঢাকা শহরে খোলা জায়গা নেই।’
বর্তমানে বিল্ডিং কোড মেনে ভবন হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কিন্তু যেসব ভবন আগে হয়েছে, সেগুলোর নব্বই শতাংশ ভূমিকম্প টেকসই না। আমাদের এখন থেকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, নতুন করে কোনো জলাশয় এবং পাহাড়ে হাত দেয়া যাবে না।’
আমার বার্তা/এল/এমই

