
ময়মনসিংহে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে গার্মেন্টস কর্মী দিপু চন্দ্র দাশকে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, ‘যত বড় অপরাধীই হোক, আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে কাউকে পিটিয়ে হত্যা করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) সকালে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্পের জেলা কর্মশালায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন ধর্ম উপদেষ্টা।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল আহসান, হিন্দু ধর্ম কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান তপন চন্দ্র মজুমদার, প্রকল্প পরিচালক নিত্য প্রকাশ বিশ্বাসসহ হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের কর্মকর্তারা।
ময়মনসিংহে দিপু হত্যাকাণ্ড এবং রাজবাড়ীর পাংশায় সংঘটিত পৃথক ঘটনার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‘ময়মনসিংহে দিপু হত্যার ঘটনায় আমরা প্রথম দিন থেকেই দুঃখ প্রকাশ করেছি। আমরা কোনো দিন চাই না এই কিলিং আউটসাইড দি জুডিশিয়ারি—ইট ইজ নট অ্যাক্সেপ্টেবল টু আস। ইন এনি সারকামস্ট্যান্স উই কান্ট অ্যালাও মব জাস্টিস। তাহলে তো দেশ থাকবে না, সরকার থাকবে না, অ্যাডমিনিস্ট্রেশন থাকবে না; আইন যদি আমি করি, বিচার যদি আমি করি।’
উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘কেউ যদি ধর্ম অবমাননা করে থাকে—করতে পারে, ফেসবুক ওপেন প্ল্যাটফর্ম, করে—তার জন্য আমাদের তো নির্ধারিত আইন আছে। সরকার আছে, ল এনফোর্সমেন্ট এজেন্সিজ আছে, জাস্টিস আছে, তার বিচার হবে যদি সে করে থাকে। কিন্তু এটার একটা অজুহাত তুলে কোনো মানুষকে পিটিয়ে মারা এবং তাকে পুড়িয়ে ফেলা—এটা জঘন্যতম কাজ। এটার নিন্দা জানাই।’
দিপু হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা আমাদের গভর্নমেন্টের পক্ষ থেকে আমাদের মাননীয় শিল্প উপদেষ্টাকে দিপুর বাড়িতে পাঠিয়েছি। এই মানুষটাও দরিদ্র। তো ক্যাবিনেটেও আমরা এটা আলোচনা করেছি—দিপুর পরিবারের সমস্ত খরচ বাংলাদেশ সরকার বহন করবে।’
রাজবাড়ীর পাংশার ঘটনায় সাম্প্রদায়িক কোনো যোগ নেই উল্লেখ করে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশে তিনি ঘটনাটির প্রকৃত চিত্র জানতে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেছেন। প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, নিহত ব্যক্তি অমিত নামে পরিচিত এবং তাঁর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও ডাকাতির অভিযোগ রয়েছে। ডাকাতির সময় গুলি ছোড়ার ঘটনায় স্থানীয়রা তাঁকে ধরে পিটিয়ে হত্যা করে।’
তবে এ প্রসঙ্গে ধর্ম উপদেষ্টা স্পষ্ট করে বলেন, ‘আমরা পিটিয়ে মারার সংস্কৃতি থেকে সরে আসতে চাই। যত বড় অপরাধী হোক, আমাদের তো আইন আছে, ল মাস্ট টেক ইটস ওউন কোর্স। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। সে ডাকাত হলেও তার আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না থাকলে, এভাবে হলে তো আপনারে পিটিয়ে মারবে, আরেকজনকে পিটিয়ে মারবে, আরেকজনের ঘরে আগুন ধরিয়ে দেবে। এই যে আগুন ধরিয়ে দেওয়া অথবা পিটিয়ে মারা—আমরা এই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে চাই। আমরা রুল অব ল, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাই।’
আগুন দেওয়া, পিটিয়ে হত্যা—এই সহিংস সংস্কৃতি পরিহার করে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠাই সরকারের লক্ষ্য বলে উল্লেখ করে ধর্ম উপদেষ্টা।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‘আজকে নমিনেশন পেপার সাবমিটের লাস্ট ডেট। জাতি একটা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। একটা নির্বাচনী আবহ তৈরি হয়েছে। আমরা আশা করছি, আমাদের দৃঢ় প্রত্যাশা, উৎসবমুখর পরিবেশে ১২ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং যারাই ম্যান্ডেট পেয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসবেন, আমরা তাদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে আমরা পুরোনো ঠিকানায় ফিরে যাব। এটা আমাদের কমিটমেন্ট। আমরা এভাবে এগোচ্ছি এবং ইলেকশন মাস্ট বি হেল্ড ফেয়ার, ফ্রি, ইমপারশিয়াল অ্যান্ড ইনক্লুসিভ হবে। এটাই আমরা সমস্ত রিটার্নিং অফিসারদের, ল এনফোর্সমেন্ট এজেন্সি যারা আছেন তাদের আমরা নির্দেশনা দিয়েছি।’
আমার বার্তা/এমই

