
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে দেশজুড়ে মনোনয়নপত্র জমা দিচ্ছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা। সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) সকাল থেকেই বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় উৎসবমুখর পরিবেশে কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এ সময় প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের অনেকেই সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, রোববার (২৮ ডিসেম্বর) পর্যন্ত সারা দেশে ৩ হাজার ১১৪ জন সম্ভাব্য প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেও দাখিল করেছিলেন মাত্র ১৬৬ জন। তবে শেষ দিনে সোমবার সকাল থেকেই বিভিন্ন আসনে মনোনয়ন দাখিলের খবর পাওয়া যাচ্ছে।
এবারের সংসদ নির্বাচনে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) নিবন্ধিত মোট ৫৮টি রাজনৈতিক দল অংশ নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। তবে নিবন্ধন স্থগিত থাকায় আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না।
হেভিওয়েট প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিল
বেগম খালেদা জিয়া: বগুড়া-৭, দিনাজপুর-৩ ও ফেনী-১ মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার। তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় এবার প্রথমবারের মতো মনোনয়নপত্রে স্বাক্ষরের পরিবর্তে আঙুলের ছাপ ব্যবহার করা হয়েছে। একই সঙ্গে সবকটি আসনে বিকল্প প্রার্থী রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।
তারেক রহমান (ঢাকা-১৭): ঢাকা-১৭ আসনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। তাঁর পক্ষে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম মনোনয়নপত্র জমা দেন। এসময় তারেক রহমানের প্রস্তাবক ছিলেন ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার এবং সমর্থক ছিলেন অ্যাডভোকেট আলমগীর হোসেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (ঠাকুরগাঁও-১): ঠাকুরগাঁও-১ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি দলীয় প্রধান খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট প্রার্থনা করেন।
জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতৃবৃন্দ: খুলনা-৫ আসনে দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এছাড়া খুলনার আরও তিনটি আসনে যথাক্রমে কৃষ্ণ নন্দী (খুলনা-১), অ্যাডভোকেট হেলাল হোসেন (খুলনা-২) ও মাওলানা আবুল কালাম আজাদ (খুলনা-৬) মনোনয়নপত্র জমা দেন। ঢাকা-১৩ আসনে মাওলানা মামুনুল হক, ঢাকা-১৪ আসনে জামায়াতের প্রার্থী ব্যারিস্টার আরমান বিন কাশেম আত্মবিশ্বাসের সাথে জয়ের আশা ব্যক্ত করেছেন।
ববি হাজ্জাজ (ঢাকা-১৩): ঢাকা-১৩ আসনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে লড়তে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ববি হাজ্জাজ। তিনি শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় কোনো প্রার্থী সর্বোচ্চ পাঁচজন ব্যক্তিকে সঙ্গে নিতে পারবেন। মিছিল, শোডাউন কিংবা জনসমাগম সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার মোট ভোটারের এক শতাংশের সমর্থনসূচক তালিকা বাধ্যতামূলক হলেও সাবেক সংসদ সদস্যদের জন্য এই শর্ত শিথিল রাখা হয়েছে। মনোনয়নপত্র জমার সময় ৫০ হাজার টাকা জামানতসহ হলফনামা ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্ত করা বাধ্যতামূলক।
তফশিল অনুযায়ী, আজ মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় শেষ হলে আগামীকাল মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) থেকে ২০২৬ সালের ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত সংগৃহীত মনোনয়নপত্রগুলো যাচাই-বাছাই করবেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা। এরপর কোনো প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হলে ৫ থেকে ৯ জানুয়ারির মধ্যে তারা নির্বাচন কমিশনে আপিল করতে পারবেন, যা নিষ্পত্তি হবে ১০ থেকে ১৮ জানুয়ারির মধ্যে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ জানুয়ারি এবং ২১ জানুয়ারি প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে। প্রতীক পাওয়ার পর ২২ জানুয়ারি থেকে প্রার্থীরা আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করতে পারবেন যা চলবে ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত। সবশেষে ১২ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার দেশজুড়ে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
আমার বার্তা/এমই

