ই-পেপার শনিবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২২ ভাদ্র ১৪৩২

ক্ষমতার পালাবদল হলেও চাঁদাবাজির সংস্কৃতি অপরিবর্তিত

জামিল হোসেন
০২ আগস্ট ২০২৫, ১৪:৫৮

বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ক্ষমতার পালাবদল বহুবার হয়েছে। এক সরকার গিয়েছে, আরেক সরকার এসেছে। ক্ষমতার এই পরিবর্তনে সমাজে অনেক পরিবর্তন এসেছে, নীতিমালা বদলেছে, প্রশাসনের ধরনেও পরিবর্তন দেখা গেছে। তবে কিছু নেতিবাচক দিক রয়ে গেছে আগের মতোই, যার মধ্যে চাঁদাবাজি সংস্কৃতি অন্যতম। চাঁদাবাজি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে একটি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা হিসেবে রয়ে গেছে। চাঁদাবাজি একটি অপরাধমূলক কার্যকলাপ, যেখানে কোন ব্যক্তি ক্ষমতার প্রভাব ব্যবহার করে অন্য কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান থেকে জোরপূর্বক অর্থ আদায় করে। যদিও সময়ের সাথে সাথে রাজনৈতিক ক্ষমতার পরিবর্তন এসেছে, তবুও চাঁদাবাজি সংস্কৃতি কমেনি, বরং এটি বিভিন্ন রূপে অব্যাহত রয়েছে।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: বাংলাদেশে চাঁদাবাজির সংস্কৃতি মূলত স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকে শুরু হয়। ১৯৭১ সালের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতি ও অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অপরাধী গোষ্ঠীগুলোর উত্থান ঘটে। ১৯৮০ ও ১৯৯০-এর দশকে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা ও সংঘাতের সময় চাঁদাবাজি একটি সংগঠিত অপরাধ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। রাজনৈতিক নেতারা প্রায়শই স্থানীয় অপরাধী গোষ্ঠীগুলোর সাথে জোট বেঁধে তাদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতেন, এবং এর বিনিময়ে এসব গোষ্ঠীকে চাঁদাবাজির সুযোগ দেওয়া হতো।

রাজনৈতিক সংযোগ: বাংলাদেশের রাজনীতিতে চাঁদাবাজির সংস্কৃতি রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় নেতারা চাঁদাবাজি করে আদায়কৃত অর্থ দলীয় তহবিলে জমা দেন বা নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেন। আবার কিছু ক্ষেত্রে অপরাধী গোষ্ঠী সরাসরি রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা পায়, যা তাদেরকে আইনের ঊর্ধ্বে থাকার সুযোগ দেয়। রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা না থাকলে চাঁদাবাজি সংস্কৃতি এতটা বিস্তৃত হতো না।

ক্ষমতার পরিবর্তন ও চাঁদাবাজি: বাংলাদেশে ক্ষমতার পরিবর্তন হলেও চাঁদাবাজি সংস্কৃতি কমেনি। এর প্রধান কারণ হল রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় আসার পর তাদের সমর্থক গোষ্ঠীগুলোর স্বার্থ রক্ষা করে। নতুন সরকার ক্ষমতায় এলে পূর্ববর্তী সরকারের সমর্থক গোষ্ঠীগুলোর চাঁদাবাজি কিছুটা কমে, কিন্তু নতুন ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক গোষ্ঠী একই পদ্ধতি অবলম্বন করে। ফলে চাঁদাবাজি সংস্কৃতি চক্রাকারে চলতে থাকে।

চাঁদাবাজির প্রভাব: চাঁদাবাজি সংস্কৃতি বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি বড় বাধা। এটি শুধু অপরাধ নয়, বরং ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে একটি বড় প্রতিবন্ধক। চাঁদাবাজি সংস্কৃতি বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে নানাভাবে:

ব্যবসায়ীদের উপর চাপ: ব্যবসায়ীরা নিয়মিত চাঁদা দিতে বাধ্য হন, যা তাদের জন্য অতিরিক্ত বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। এই চাঁদার টাকা পণ্যের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করা হয়, যার ফলে সাধারণ ক্রেতাদের বেশি দাম দিতে হয়।

বিনিয়োগের পরিবেশ নষ্ট: বিদেশি বা স্থানীয় বিনিয়োগকারীরা চাঁদাবাজির মতো অপরাধমূলক কার্যকলাপ দেখে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে ভয় পান। এর ফলে দেশে বিনিয়োগ কমে যায়, যা অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে।

ছোট ব্যবসায়ীদের ক্ষতি : ছোট ব্যবসায়ীরা চাঁদাবাজির সবচেয়ে বড় শিকার। তাদের আয় কম, কিন্তু চাঁদা দিতে না পারলে তাদের ব্যবসা বন্ধ হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

রাষ্ট্রের রাজস্ব ক্ষতি: চাঁদাবাজির মাধ্যমে আদায়কৃত টাকা রাষ্ট্রের খাতে যায় না, বরং তা অপরাধী গোষ্ঠীর পকেটে চলে যায়। এর ফলে সরকারের রাজস্ব আয় কমে যায়।

চাঁদাবাজি রোধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ

নিচে তাদের ভূমিকা তুলে ধরা হলো

  • চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা
  • চাঁদাবাজদের গ্রেপ্তার করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা
  • ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা প্রদান
  • ব্যবসায়ীদের চাঁদাবাজদের হুমকি থেকে রক্ষা করা।
  • চাঁদাবাজি সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে অপরাধীদের শনাক্ত করা।
  • চাঁদাবাজির কুফল সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা।
  • প্রযুক্তির ব্যবহার: সিসি ক্যামেরা, মোবাইল ট্র্যাকিং এবং ডিজিটাল নজরদারি ব্যবস্থার মাধ্যমে চাঁদাবাজদের শনাক্ত করা।

সমাধানের উপায়: চাঁদাবাজি সংস্কৃতি রোধ করতে হলে রাজনৈতিক সদিচ্ছা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন। কারণ, বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে চাঁদাবাজি সংস্কৃতি একটি জটিল ও বহুমাত্রিক সমস্যা। ক্ষমতার পরিবর্তন হলেও এই চাঁদাবাজি সংস্কৃতি রোধ করা সম্ভব হয়না, কারণ এটি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থের সাথে গভীরভাবে জড়িত।

লেখক: জামিল হোসেন, অনলাইন নিউজ এডিটর, দৈনিক আমার বার্তা, ঢাকা।

ডাকসু নির্বাচনে নতুন সমীকরণ এবং এক অনন্য বার্তা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ  (ডাকসু) নির্বাচন মানে রাজনীতির নতুন  সমীকরণ নয় শুধু, নতুন মেরুকরণ

শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা প্রশমন হোক

শিক্ষা জাতির অগ্রগতির মূল চাবিকাঠি। কিন্তু দুঃখজনকভাবে বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গন আজ বারবার অস্থিরতায় কাঁপছে। যে বিশ্ববিদ্যালয়,

আমাদের বাক-স্বাধীনতা

বাক-স্বাধীনতা বলতে কথা বলার স্বাধীনতা সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা করাও যাবে,উন্নত বিশ্বে এর বহুল চর্চা রয়েছে

চামড়া শিল্পে বিশ্বজয়ের প্রস্তুতিঃ দরকার প্রযুক্তি ও নীতিগত সহায়তা 

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে চামড়া শিল্প একটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তৈরি পোশাক শিল্পের
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উত্তম কৃষি চর্চার মাধ্যমে বিজয়নগরে সফলতা অর্জন করলেন কৃষক আব্দুল জলিল

আলফাডাঙ্গায় যৌথবাহিনীর অভিযানে মাদক সম্রাট রফিকুল গ্রেপ্তার

শার্শায় বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের শাহাদাৎ বার্ষিকীতে শ্রদ্ধার অর্ঘ্য

ঝিকরগাছায় মাসব্যাপী ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের উদ্বোধন

বেনাপোল সীমান্তে ভারতে অনুপ্রবেশকালে ৩ বাংলাদেশি আটক

চাঁদপুরের শিশুকে গলা টিপে হত্যার অভিযোগ চাচি আটক

কসবায় একটি অসহায় পরিবারের উপর হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ

মহানবীর জীবনাদর্শই বিশ্বে শান্তি ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে পারে

হাতকড়া-শেকল পরিয়ে ৩০ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠালো যুক্তরাষ্ট্র

আলুর দাম নিয়ে আলোচনা হয়েছে, আমরা রপ্তানিতে প্রণোদনা দিচ্ছি

ভয় ধরাচ্ছে ডেঙ্গু, এক সপ্তাহে ১২ জনের মৃত্যু

সীমান্তে ৫ কোটি টাকার মোবাইল এক্সোসরিজ জব্দ

তিন দফা দাবিতে গণঅধিকার পরিষদের সংহতি সমাবেশ

ফের দুই মহাসড়ক অবরোধ, ঢাকা-বরিশাল ও খুলনা রুটে যান চলাচল বন্ধ

থাইল্যান্ডের নতুন প্রধানমন্ত্রী হলেন আনুতিন চার্নভিরাকুল

প্রিয়নবীকে ভালোবাসার অনন্য দৃষ্টান্ত: আবু আইয়ুব আনসারীর আতিথেয়তা

আবাসন-খাবারের মানোন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেব: সাদিক কায়েম

শ্রীলঙ্কায় পর্যটকবাহী বাস খাদে পড়ে নিহত ১৫

নীলফামারীর সাবেক এমপি সাদ্দাম হোসেন গ্রেপ্তার

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মেঝেতে রাত কাটালেন ববি ভিসি