রফতানিমুখী সাব-কন্ট্রাক্ট বা ঠিকায় কাজ করা কারখানার উদ্যোক্তাদেরও প্রণোদনা দেয়ার সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলে নগদ সহায়তার হার ০.৩ শতাংশ থেকে ১ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। রফতানিকারকরা বলছেন, সরকারের এমন উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে ছোট ও মাঝারি কারখানাগুলোর সক্ষমতা বাড়বে এবং রফতানি বাজারও সম্প্রসারিত হবে। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, শুল্ক চাপ মোকাবিলায় সব সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো প্রয়োজন।
সম্প্রতি মার্কিন বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আরোপিত অতিরিক্ত ৩৭ শতাংশ শুল্ক কয়েক দফার আলোচনার পর কমিয়ে ২০ শতাংশে আনা হয়েছে। এতে প্রতিযোগী দেশের তুলনায় সুবিধা থাকা সত্ত্বেও বেশি শুল্ক পরিশোধের চাপ ক্রেতাদের ওপর বাড়ছে। আমদানিকারকরা তাই ফার্স্ট সেল ব্যবস্থায় ঝুঁকছেন।
যে প্রতিষ্ঠান পণ্য উৎপাদন করে, সেই প্রতিষ্ঠান যা বিক্রি করবে তাই-ফার্স্টসেল। এতে সাব-কন্ট্রাক্ট বা ঠিকায় কাজ করা কারখানাগুলো ফার্স্টসেলকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত হয়। এতোদিন এসব প্রতিষ্ঠানে তৈরি করা পণ্য রফতানি করে প্রণোদনা পেতো ক্রয়াদেশ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে এবার ক্রয়াদেশ পাওয়া কারখানার পাশাপাশি সাব-কন্ট্রাক্ট কারখানাগুলোকেও ১ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেয়ার সুপারিশ করেছে ট্যারিফ কমিশন। এটি বর্তমানে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘মার্কিন ক্রেতা যখন সুবিধা পাবে, তখন বেশি অর্ডার প্লেস করবে। এতে বড় ফার্মের সঙ্গে সাব-কন্ট্রাক্ট কারখানাগুলোরও কার্যক্রম সচল থাকবে এবং সুবিধা দুইপাশেই পৌঁছাবে।’
উদ্যোক্তারা বলেন, মার্কিন বাজারকে সামনে রেখে এই সুপারিশ কার্যকর হলে ইউরোপসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের প্রতিযোগিতা আরও বাড়বে। বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) পরিচালক রশিদ আহমেদ হোসাইনি বলেন,‘চীন ও ভারত যখন তাদের পণ্য ইউরোপে পাঠাবে, তখন আমাদের ইউরোপিয়ান ক্রেতা হারানোর আশঙ্কা রয়েছে। সব সাব-কন্ট্রাক্ট ফ্যাক্টরির জন্য নীতি সহায়তা ১ শতাংশ নাকি শূন্য দশমিক ০৩ শতাংশ হবে; এটি স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন। বাস্তবে যদি এটি ১ শতাংশ হয়, তাহলে এটি আমাদের ব্যবসার জন্য একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হবে।’
রফতানি বাজারে এলডিসি উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সম্ভাব্য সব ধরনের নীতি ও কৌশল দ্রুত কার্যকর করার তাগিদ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আইনুল ইসলাম বলেন, ‘ছোট ছোট কারখানাগুলো ফার্স্ট সেল সুবিধা নিতে পারছে না। তাই যদি বড় ফার্মগুলোর মাধ্যমে তারা রফতানিতে প্রবেশ করতে পারে, তাহলে এই ছোট ফার্মগুলোও গতি পাবে। এর ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের প্রতিযোগী ক্ষমতা আরও বাড়বে।’
উল্লেখ্য, বর্তমানে তৈরি পোশাক রফতানিতে বিশেষ নগদ সহায়তা দেয়া হয় দশমিক ৩ শতাংশ। তবে গত বছরের শুরুতেও এই প্রণোদনার হার ছিল ১ শতাংশ।
আমার বার্তা/এল/এমই