গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে রফতানি আয়ের নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির কারণে মন্দার মুখে পড়েছে দেশের তৈরি পোশাক শিল্প। ক্রয়াদেশেও নেই আশার আলো। এরমধ্যেই রয়েছে মার্কিন বাড়তি শুল্ক উৎপাদকের ঘাড়ে চাপানোর চাপ।
এমন বহুমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পোশাকের দর কষাকষিতে উদ্যোক্তাদের মূল্যছাড় না দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন নিট শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ)। এদিকে, কেবল মার্কিন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারের ওপর নির্ভর না থেকে বিকল্প বাজার তৈরি করার পরামর্শ দিচ্ছেন অর্থনীতিবিদরা।
দেশের রফতানি বাণিজ্যের প্রাণশক্তি হলো তৈরি পোশাক শিল্প। এই খাতের ওপর ভর করেই গত অর্থবছরে মোট রফতানি আয় দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৮২৮ কোটি ৩৯ লাখ ডলারে। তবে চলতি অর্থবছরে এই খাত শঙ্কার মুখে পড়েছে। বছরের ব্যবধানে, গত সেপ্টেম্বরে রফতানি আয় কমেছে ৫.৬৬ শতাংশ, আর বাড়তি মার্কিন শুল্ক কার্যকর হওয়ার মাস আগস্টে কমেছে ৪.৭৫ শতাংশ। যদিও অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে প্রায় ২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি থাকার কারণে প্রান্তিক হিসাব অনুযায়ী জুলাই-সেপ্টেম্বরে খাতটি সাড়ে ৯ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) পরিচালক মজুমদার আরিফুর রহমান বলেন, জুলাই মাসে পোশাক রফতানি তুলনামূলক ভালো ছিল। কারণ আগস্টে নিষেধাজ্ঞা থাকায় তখনকার রফতানি ২০ শতাংশ শুল্কের আওতায় পড়ত। তাই বেশিরভাগ কারখানা জুলাইয়ের মধ্যেই পণ্যের শিপমেন্ট শেষ করে ফেলে। ফলে জুলাইয়ে রফতানি বেড়েছে, আর আগস্টে তা কিছুটা কমে গেছে।
তবে নীট পোশাক ক্রয়াদেশের ইউডি পরিসংখ্যান আগামীর চ্যালেঞ্জের ইঙ্গিত দিচ্ছে। মার্কিন শুল্ক আরোপের আগে জুলাই মাসে বছরের ব্যবধানে ক্রয়াদেশ ১৩ শতাংশের বেশি বেড়েছিল, কিন্তু শুল্কারোপের মাসে তা কমে যায় প্রায় ৪ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে ক্রয়াদেশ প্রায় ২ শতাংশ বাড়লেও, টানা দুই মাস নেতিবাচক প্রবৃদ্ধিতে থাকা পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা তাতে তেমন আশার আলো দেখছেন না।
বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ইউরোপের বাজারেও আমাদের বড় ধরনের প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হয়েছে। এ কারণেই সেখানে আমাদের অর্ডার কমে যাচ্ছে। মূলত দুটি কারণেই এই সময়ে অর্ডার কমেছে, আর আগামী কয়েক মাসও এই ধারা অব্যাহত থাকবে।
চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাড়তি মার্কিন শুল্কের ভার কে বহন করবে? ক্রেতা নাকি বিক্রেতা? -এমন প্রশ্নের সমাধান না হওয়া পর্যন্ত দর কষাকষিতে কোনো ছাড় না দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন শিল্প নেতারা। মোহাম্মদ হাতেম বলেন, মার্কিন ক্রেতারা অনৈতিকভাবে আমাদের ওপর নতুন শুল্কের একটি শতাংশ চাপানোর চেষ্টা করছে, যা আমরা কোনোভাবেই মেনে নেইনি এবং ভবিষ্যতেও মেনে নেব না।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, কেবলমাত্র ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মার্কিন বাজার নির্ভরতা নয়, বরং জোর দিতে হবে বিকল্প বাজার তৈরিতে। অর্থনীতিবিদ মো. মাজেদুল হক বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের বাজার বাংলাদেশের জন্য কখনো স্থায়ী হয়নি। তার কারণ, বাংলাদেশের শ্রম আইন, মানবাধিকার, গণতন্ত্র এবং বাক্স্বাধীনতা নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে এবং তারা এখনও এসব নিয়ে প্রশ্ন করছে। তবে পাকিস্তান ও ভারতের সঙ্গে যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি হয়েছে, যদি আমরা এখনো সেই চুক্তিগুলো করতে পারি, তাহলে বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা সম্ভব হবে।
পোশাক শিল্পের মন্দাভাবে গত মাসে দেশের মোট রফতানি আয়ও এক বছর আগের তুলনায় কমেছে ৪.৬১ শতাংশ। গত সেপ্টেম্বর মাসে দেশে পণ্য রফতানি থেকে আয় এসেছে ৩৬২ কোটি ৭৫ লাখ মার্কিন ডলার। আর ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রফতানি আয়ের পরিমাণ ছিল ৩৮০ কোটি ২৮ লাখ ডলার।
আমার বার্তা/এল/এমই