
২০২১ সাল থেকে দেশের পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ ক্রমেই কমছে। চলতি বছরেও এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে।
এ বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বরের মধ্যে (১১ মাসে) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বিদেশি বিনিয়োগকারীরা মাত্র ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন করেছেন, এক্সচেঞ্জটির মোট লেনদেনের মধ্যে যার হার মাত্র ১ দশমিক ২২ শতাংশ।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের লেনদেনের পরিমাণ ছিল দেড় কোটি ডলার। এরপর ফেব্রুয়ারিতে ২ কোটি ২০ লাখ, মার্চে ১ কোটি ৪০ লাখ, এপ্রিলে ৩ কোটি ৫০ লাখ, মে মাসে ৪ কোটি ১০ লাখ, জুনে ২ কোটি ৩০ লাখ, জুলাইতে ৪ কোটি, আগস্টে ৩ কোটি ১০ লাখ, সেপ্টেম্বরে ৩ কোটি ৬০ লাখ ও অক্টোবরে ৩ কোটি ডলার লেনদেন করেছেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। এ সময়ে প্রতি মাসে গড়ে বিদেশিদের লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২ কোটি ৮৭ লাখ ডলার। সর্বশেষ গত নভেম্বরের প্রথমার্ধে ১ কোটি ডলারের লেনদেন করেছেন বিদেশিরা। সব মিলিয়ে গত ১১ মাসে পুঁজিবাজারে বিদেশিরা ৩১-৩২ কোটি ডলার লেনদেন করেছেন। প্রতি ডলার ১২২ টাকা ৩৪ পয়সা হিসাবে বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ৩ হাজার ৮৬২ কোটি টাকা।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, পুঁজিবাজারে ক্রমশ বিদেশিদের বিনিয়োগ কমে যাওয়ার পেছনে বেশকিছু কারণ রয়েছে। এর মধ্যে, এমএসসিআই ফ্রন্টিয়ার মার্কেট সূচকের রিটার্নের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদে শ্লথগতির কারণে বিনিয়োগকারীরা বেশি রিটার্নের আশায় এখান থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে অন্যান্য অঞ্চলের বাজারগুলোতে বিনিয়োগ করেছেন। পাশাপাশি দেশের ব্যাক খাতের দুর্বলতা, তারল্য ঝুঁকি, মুদ্রা বিনিময় হার ঝুঁকি ও পর্যাপ্ত ভালো শেয়ারের জোগান না থাকার বিষয়গুলোও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলেছে।
এদিকে, সার্বিকভাবে চলতি বছরের ১১ মাসে দেশের পুঁজিবাজার পরিস্থিতিও ছিল হতাশাজনক। এ সময়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ২৩৭ পয়েন্ট। এ সময়ে ডিএসইতে দৈনিক সর্বোচ্চ গড় লেনদেন হয়েছে গত আগস্টে, ৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার। আর সর্বনিম্ন দৈনিক গড় লেনদেন ছিল মার্চে, ১ কোটি ৪০ লাখ ডলার।
তথ্য অনুয়ায়ী, গত নয় বছরে এক্সচেঞ্জটির মোট লেনদেনে বিদেশিদের অংশগ্রহণ মাত্র ১ দশমিক ২২ শতাংশে নেমে এসেছে। এর আগে টানা চার বছর ধরে দেশের পুঁজিবাজারে বিদেশিদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে।
করোনা মহামারির বছর ২০২০ সালে পুঁজিবাজারে বিদেশিদের লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১০ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা, যা ছিল ডিএসইর মোট লেনদেনের ৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এর পরের বছর ২০২১ সালে এক্সচেঞ্জটির মোট লেনদেনে বিদেশিদের অংশগ্রহণের হার নেমে যায় ১ দশমিক ১০ শতাংশে এবং টাকার অংকে লেনদেন দাঁড়ায় ৭ হাজার ৭৬৪ কোটিতে। ২০২২ ও ২০২৩ সালে ডিএসইতে বিদেশিদের লেনদেনের পরিমাণ তলানিতে গিয়ে ঠেকে। এ দুই বছরে এক্সচেঞ্জটির মোট লেনদেনে বিদেশিদের অংশগ্রহণের হার ছিল যথাক্রমে দশমিক ৮৯ ও দশমিক ৭৭ শতাংশ। এ সময়ে টাকার অঙ্কে বিদেশিদের লেনদেনের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৪ হাজার ১৮০ কোটি ও ২ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা।
সর্বশেষ ২০২৪ সালে ডিএসইতে বিদেশিদের লেনদেন কিছুটা বেড়ে ৩ হাজার ৯২৯ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে, যা ছিল গত বছরে এক্সচেঞ্জটির মোট লেনদেনের ১ দশমিক ২২ শতাংশ।
আমার বার্তা/এল/এমই

