
ভারতীয় পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভার বিরোধীদলীয় নেতা রাহুল গান্ধী আজ বুধবার তাঁর বহুল প্রতীক্ষিত ‘এইচ বোমা’ ফেলেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, গত বছরের হরিয়ানা বিধানসভা নির্বাচনে ব্যাপক ভোট জালিয়াতি হয়েছে। তাঁর দাবি, হরিয়ানায় মোট ২ কোটি ভোটারের মধ্যে ২৫ লাখ ভোট চুরি হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি আটজন ভোটারের একজন ভুয়া, যা মোট ভোটের সাড়ে ১২ শতাংশ। তবে এখানেই শেষ নয়। রাহুল দেখিয়েছেন, ব্রাজিলীয় এক মডেল হরিয়ানা নির্বাচনে ২২ বার ভোট দিয়েছেন।
রাহুল গান্ধী বলেন, নির্বাচনের পর বহু কংগ্রেস প্রার্থী তাঁকে জানিয়েছেন—কিছু একটা গড়বড় হয়েছে। সব এক্সিট পোল অর্থাৎ বুথফেরত জরিপে কংগ্রেসের জয়ের পূর্বাভাস ছিল। কিন্তু ফল এল উল্টো। জিতল বিজেপি। তিনি সাংবাদিকদের সামনে বিজেপি নেতা ও মুখ্যমন্ত্রী নয়াব সিং সাইনির একটি ভিডিও দেখান। সেখানে নির্বাচনের ফল ঘোষণার দুই দিন আগে সাইনি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেছিলেন, ‘ব্যবস্থা হয়ে গেছে, বিজেপি জিতছে।’
রাহুল গান্ধীর প্রশ্ন, ‘এই ব্যবস্থা বলতে কী বোঝানো হয়েছিল? তখন সব দলই বলছিল কংগ্রেস বিপুল ব্যবধানে জিতছে, অথচ তিনি নিশ্চিন্ত মুখে বলছেন বিজেপি জয়ী।’ তিনি আরও বলেন, হরিয়ানার ইতিহাসে এই প্রথমবার ডাকযোগে ভোটের ফল বুথের ভোটের বিপরীত এসেছে। তিনি বলেন, ‘আমি ভারতের নির্বাচন কমিশন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে প্রশ্ন করছি, শতভাগ প্রমাণসহ। আমরা নিশ্চিত, কংগ্রেসের বিজয়কে পরাজয়ে পরিণত করতে একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়েছিল।’
তাঁর দাবি, কংগ্রেস আটটি আসনে খুব সামান্য ব্যবধানে হেরেছে। এর মধ্যে একটি আসনে মাত্র ৩২ ভোটে। সব মিলিয়ে ব্যবধান দাঁড়ায় ২২ হাজার ৭৭৯ ভোট। তিনি বলেন, ‘অর্থাৎ পুরো হরিয়ানা নির্বাচন কংগ্রেস ২২ হাজার ৭৭৯ ভোটে হেরেছে।’
গান্ধী উদাহরণ হিসেবে দেখান, ভোটার তালিকায় এক নারীর ছবি ২২ বার ব্যবহার করা হয়েছে। ওই নারীর ছবিটি আসলে এক ব্রাজিলীয় মডেলের, যা একটি স্টক ফটো ওয়েবসাইট থেকে বিনা মূল্যে ডাউনলোড করা যায়। তিনি বলেন, ওই মডেলের ছবি বিভিন্ন নামে তালিকাভুক্ত। যেমন, ‘সুইটি, সীমা, সরস্বতী’ ইত্যাদি। তিনি বলেন, ‘এই নারী ১০টি ভিন্ন বুথে ভোট দিতে পারেন। মানে, এটা কোনো এলোমেলো ভুল নয়, বরং একটি কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালিত অপারেশন।’
তিনি আরও জানান, একটি আসনে ১০০টি ভোটার আইডিতে একই নারীর ছবি পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, ‘এই নারী চাইলে ১০০ বার ভোট দিতে পারেন। এর মাধ্যমে ভোটার তালিকায় এমন জায়গা তৈরি করা হয় যাতে বিজেপির লোকজন অন্য রাজ্য থেকে এসে ভোট দিতে পারে।’
আরেক নারীর ছবিও তিনি দেখান, যা ২২৩ বার ব্যবহার হয়েছে দুটি বুথের ভোটার তালিকায়। তাঁর অভিযোগ, ‘এই কারণেই নির্বাচন কমিশন বুথের সিসিটিভি ফুটেজ ধ্বংস করে।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের পক্ষে চাইলে এক সেকেন্ডেই ভুয়া ভোটার শনাক্ত করা সম্ভব। তাহলে কেন তারা করে না? কারণ, তারা বিজেপিকে সাহায্য করছে।’ এরপর তিনি একই ছবি কিন্তু ভিন্ন নামসহ ভোটার আইডির আরও কিছু উদাহরণ দেখান। তাঁর দাবি, নির্বাচনের আগে হরিয়ানার ভোটার তালিকা থেকে ৩ লাখ ৫০ হাজার নাম মুছে ফেলা হয়েছিল।
আমার বার্তা/এমই

