ই-পেপার বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫, ১২ চৈত্র ১৪৩২

বাংলা চলচ্চিত্রের সোনালী অতীত

অলোক আচার্য:
০৩ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৯
আপডেট  : ০৩ এপ্রিল ২০২৪, ১২:১০

বিনোদনের একটি বড় মাধ্যম হলো চলচ্চিত্র। কিন্তু সত্যিকার অর্থে আমাদের দেশে ভালোমানের চলচ্চিত্রের সংখ্যা একেবারেই নগণ্য। দুই ঈদের আগে কয়েকটি নতুন সিনেমার প্রচার দেখা গেলেও সারা বছর বলতে গেলে নতুন কোন সিনেমার দেখা মেলে না। নতুন কোনো চলচ্চিত্র দর্শক মহলে আলোচনাও সৃষ্টি করতে পারছে না। বাংলাদেশের দর্শক এখন রীতিমতো ভারতীয় চলচ্চিত্রের দর্শক। অনেকে দেশের চলচ্চিত্রের কলাকুশলীদের ঠিকমতো চেনে না। এক সময় যে নায়ক নায়িকারা দেশের মানুষের কাছে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে ছিল এখন সেরকম কোন নায়ক নায়িকা বা পার্শ্ব অভিনেতার দেখা পাওয়া যায় না। নতুন কোনো মুখও উঠে আসছে না। দু’একজনের ওপর নির্ভর করেই বাংলা সিনেমা ধুকছে। অভিনেতায় যেমন কোন বৈচিত্র্য নেই তেমনি অভিনয়েও নেই বৈচিত্র্য। ফলে একঘেয়ে চলচ্চিত্র থেকে মানুষ আজ দূরে সরে গেছে। নতুন প্রজন্মের কাছে বাংলা সিনেমা নিয়ে তেমন আগ্রহও নেই। অথচ কোন সিনেমার গান মানুষের মুখে মুখ ঘুরে ফিরতো একসময়। আজ সেরকম উল্লেখযোগ্য কোনো উদাহরণও নেই।

কারণ চলচ্চিত্রের বাজারটা এদেশে নষ্ট হয়ে গেছে। দর্শক সিনেমা বিমুখ একথা বলা ঠিক হবে না। বলা যায় দর্শক বাংলা সিনেমা বিমুখ। বাংলা সিনেমার কথা শুনলেই নাক সিটকায়। অথচ এই দেশে একসময় প্রচুর ভালো মানের সিনেমা হয়েছে এর প্রচার ছিল এমনকি পশ্চিমবঙ্গেও এর কদর ছিল। সেটা আশি বা নব্বই দশকের কথা। চলচ্চিত্রে একসময় গতানুগতিক সিনেমার সংখ্যা বাড়তে লাগলো। প্রতিটি সিনেমায় একই রকম কাহিনী। দর্শকেরও সিনেমার প্রতি আগ্রহও কমতে লাগলো। সেই এক ধরনের গল্প, না হয় নকল সিনেমা এসব কারণে দর্শক সিনেমা হল যাওয়া ছেড়ে দিলো। ঠিক এই সময় যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গেলো। হঠাৎ করে বাংলা সিনেমা শরীর নির্ভর হয়ে গেলো। যতটা না কাহিনী তার থেকেও বেশি সিনেমার বিভিন্ন পর্যায়ে গানে রগরগে সব দৃশ্য। দর্শককে হল ধরে রাখতে সিনেমা জগতে নোংরা পরিবর্তন আনা হলো। কাহিনী টাহিনীর বালাই নেই, সিনেমায় ঢুকে গেলো অশ্লীলতা। খোলামেলা পোশাক আর নিজেই দেখা যায় না এমন রগরগে দৃশ্যে সিনেমায় হতে লাগলো। এতে প্রথম প্রথম দর্শক হুমড়ি খেয়ে পরলো। তবে এই শ্রেণির দর্শক আর পরিবার নিয়ে দেখার দর্শক এক নয়। পরিবার নিয়ে সিনেমা দেখা মানুষ ভুলে গেলো। দর্শকদের বিরাট এক শ্রেণি সিনেমা হল থেকে পুরোপুরি মুখ ফিরিয়ে নিল। তাদের কাছে সিনেমা হল মানেই রগরগে সব সিনেমার নামে অশ্লীলতা দেখানো। সিনেমা হল নয় বরং বাংলা সিনেমার প্রতি নাক সিটকাতে লাগলো সবাই।

তবে হলগুলো রমরমা ব্যবসা করতে লাগলো। কারণ মানুষ যা লুকিয়ে চুরিয়ে দেখেছে তা হলগুলো দেখাতে আরম্ভ করতে লাগলো। এমনকি রাস্তাঘাটে চলতে ফিরতে যে পোষ্টার লাগানো শুরু হলো তাতেও রগরগে সব দৃশ্য আাঁকা হতে লাগলো। এক শ্রেণির দর্শক হলমুখী হলো। কিন্তু বাংলা সিনেমা মানেই যে নোংরা রগরগে দৃশ্য তা মানুষের মনে ঢুকে গেল। এমনকি ধর্ষণের দৃশ্যগুলোও এমনভাবে উপস্থাপন করা হলো যে বাড়িতে বসেও সবার সাথে সেসব দেখার অযোগ্য। আমি বহুদিন দেখেছি স্কুল কলেজগামী ছেলের দল হা করে সেসব পোষ্টার দেখছে। আমাদের সংস্কৃতির যা বারোটা বাজার ততদিনে বেজে গেলো। খুব পরিকল্পিতভাবে দেশের বহু দিন ধরে চলে আসা সংস্কৃতিটাকে নিজ হাতে শেষ করে দিলো। কেবল সিনেমা হলে দর্শক টানতে কাজের মান উন্নয়নের চেয়ে এক শ্রেণির কলাকুশলী নোংরামি নামক বিষয়টাকে সিনেমাতে ঢুকিয়ে দিল। তাতে প্রথম আর্থিক লাভ হলেও তার অল্পদিন পরেই প্রকৃত শ্রেণির দর্শক যারা সিনেমার সমঝদার সিনেমা হলে যাওয়া বন্ধ করে দিল। মাঝে মাঝে সিনেমার মাঝে কাটপিস ঢেকানো হলো। এমনও দেখেছি শেষ পর্যন্ত এক টিকিটে দুই সিনেমা চালাচ্ছে কোন সিনেমা হলে। বলাই বাহুল্য এর যে কোন একটি সিনেমাকে সিনেমা বলা যায় না। আজ দেশের সিনেমার সাথে জড়িত মানুষ জেনে গেছে যে মাঝখানে একটা বড় ভুল হয়ে গেছে। কেবল লাভের মুখ দেখার জন্য সিনেমা শিল্পটাকেই ধ্বংস করা হয়েছে। এমন নয় যে দেশে কোন ভালো সিনেমা নির্মাণ করা হচ্ছে না বা মাঝখানেও হয়নি। প্রয়াত হুমায়ুন আহমেদ, তারেক মাসুদসহ অনেক খ্যাতি পরিচালক উল্লেখযোগ্য ভালো সিনেমা নির্মাণ করেছেন। এই দেশেই তৈরি হয়েছে বিখ্যাত সব সিনেমা। ছিল বিখ্যাত সব পরিচালক। সেই দিনের গান আজও মানুষের মুখে মুখে। এখনো কিন্তু ভালো ভালো সব সিনেমা তৈরি হচ্ছে। তবে তার খোঁজ মফস্বল অঞ্চলের মানুষ কমই জানে। কারণ বাড়ির টেলিভিশনগুলোতেও বাংলার চেয়ে বিদেশি চ্যানেল দেখার প্রতি আগ্রহ বেশি।

যদিও সময়ের সাথে সাথে সিনেমা দেখার মাধ্যম পাল্টেছে। এখন সিনেমা রিলিজ হচ্ছে অনলাইনে। ইউটিউব এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখছে। প্রচুর দর্শক সেখানেই সিনেমাটি দেখছেন। ভিউ দেখেই বলে দিচ্ছেন যে কোন সিনেমার বাজার কেমন। অর্থাৎ প্রযুক্তিও এক্ষেত্রে খানিকটা দায়ী। তবে সবাইকে নিয়ে সিনেমা হলে গিয়ে হৈ হৈ করে সিনেমা দেখার যে প্রচলন সে আর এখন নেই। আবার সিনেমার কাহিনীতেও পরিবর্তন এসেছে। পরিবর্তন আসবেই। তার সাথে মানিয়ে নিতেও হবে। সেটা হচ্ছে কমই। দেশীয় চলচ্চিত্রের প্রতি মানুষের যে স্থায়ী বিতৃষ্ণা জন্মেছে তা ঠিক কবে কাটবে তা বলা যায় না। তবে আমরা খুব বড় একটি শিক্ষা পেয়েছি। একবার যদি বিশ্বাস উঠে যায় তাহলে তা ফেরানো বেশি কঠিন কাজ। আজও অনেকে ভাবেন সিনেমা হলে সিনেমা দেখা মানে খারাপ কিছু দেখা। বা ছেলেমেয়ে নিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে একসাথে সিনেমা দেখার সেই পরিবেশ নেই। ধীরে ধীরে আমাদের সংস্কৃতি নষ্টের দিকে যাচ্ছিল তখন কেউ এসে এটি প্রতিরোধ করেনি। কেউ এই পরিবেশ থেকে বের করার হাল ধরেনি। দর্শক কমে যাওয়ার সাথে সাথে এটি আপনাআপনিই বন্ধ হয়ে গেছে। ভালো কাজ, সৃষ্টিশীল কাজের মূল্য যে মানুষের আছে তা আমাদের সিনেমা হলগুলোই প্রমাণ করে।

এমন এক সময় ছিল যে ভারতীয় গান এবং এর মিউজিক পর্যন্ত হুবুহু কপি করে সিনেমার ভেতর ঢুকিয়ে দেয়া হতো। কোন কিছু নকল করেও ভিন্ন কিছু উপহার দেয়া যায়। কিন্তু এত পরিশ্রম করতে কেউ রাজি না। কেবল লাভ লোকসানের হিসেব থাকলে ভালো মানের নির্মাণ এবং অভিনয় শিল্পী পাওয়ার সম্ভাবনা কম। আমাদের দেশের চলচ্চিত্র ইন্ড্রাষ্টিজে এখন দর্শক প্রিয় অভিনয় শিল্পীর সংখ্যাই একেবারে হাতে গোণা। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে সিনেমা হলে কিন্তু ব্যাপক ভিড়। কোন সিনেমা মুক্তি পেলেই সিনেমা হলে ভিড় করছে দর্শকরা। আবার টিভির দর্শকও রয়েছে। আমাদের ক্ষতি হয়েছে চলচ্চিত্র নাম দিয়ে অশ্লীলতা সিনেমায় ঢোকানো। সেই সময়ই যদি কোন পদক্ষেপ নেয়া যেত তাহলে আমাদের আজকের এই দিন দেখতে হতো না।

বিশ্বাস চলে গেলে যে আর ফেরানো যায় না আমাদের সিনেমা হলগুলোর বর্তমান অবস্থা থেকে তা সহজেই অনুমেয়। আবার প্রতিটি উপজেলায় এমনকি জেলায়ও সিনেমা হলের সংখ্যা হাতে গোণা। বেশিরভাগ জায়গায় নেই বললেই চলে। যেগুলো ছিল সেসব আজ সুপারশপ, গুদাম ইত্যাদিতে পরিণত হয়েছে। যদি প্রতিটি উপজেলায় পরিকল্পিতভাবে একটি আধুনিক সিনেমাহল তৈরি করা যায় যেখানে একটি চমৎকার পরিবেশ তৈরি করা হবে তাহলে ভালো হয়। কারণ এটি তো বিনোদনের অন্যতম একটি মাধ্যম। সপ্তাহের ছুটির দিনে ছেলেমেয়ে নিয়ে একটি সিনেমা দেখার যে মজা সেটা এই প্রজন্মের কেউ জানে না। সেই দিন ফিরিয়ে আনতে হলে আবার শুরু করতে হবে। চলচ্চিত্রকেও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করতে হবে। তবেই না দর্শক ফিরবে। আশা করি আবার একদিন সিনেমা হলগুলো সচল হয়ে উঠবে।

লেখক : শিক্ষক ও কলামিস্ট, পাবনা।

আমার বার্তা/জেএইচ

সন্জীদা খাতুন : মহাপ্রয়াণে শ্রদ্ধাঞ্জলি

বাঙালির সাংস্কৃতিক আন্দোলন সংগ্রামের পুরোধা ব্যক্তিত্ত্ব, বিশিষ্ট রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী, সুশিক্ষক, গবেষক ও ছায়ানটের সভাপতি অধ্যাপক

আধুনিক আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ

বর্তমান বিশ্ব রাজনীতি গত কয়েক বছরে এক অভূতপূর্ব রূপান্তরের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। ঐতিহ্যবাহী একক শক্তি

রাজনৈতিক সংস্কৃতি সংস্কার বাস্তবায়নের পথে বড় বাধা

বাংলাদেশে কাঙ্ক্ষিত সংস্কার বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত কঠিন, যা মূলত রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতার জটিলতার সঙ্গে

নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক হোক ঈদযাত্রা

ঈদে রাজধানী ও অন্যান্য শহর থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষ নাড়ির টানে পরিবার-পরিজনসহ গ্রামের উদ্দেশে যাত্রা করে।
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ভালো খেলেও ভারতের বিপক্ষে ড্র হামজা চৌধুরীর বাংলাদেশের

সুবিধাবঞ্চিত ও পথশিশুদের পাশে বিত্তশালীদের এগিয়ে আসা উচিত

ভাসানচর-উড়িরচর সংযুক্তির প্রচেষ্টায় তীব্র প্রতিবাদ নোয়াখালীবাসীর

পাইকগাছায় গণহত্যা দিবস পালিত

সেনাপ্রধানের সঙ্গে মার্কিন জেনারেল জোয়েল বি ভোয়েলের সাক্ষাৎ

ড. ইউনূসের চীন সফরের ফোকাস বিনিয়োগকারীদের দেশে আনা: প্রেস সচিব

সন্জীদা খাতুন : মহাপ্রয়াণে শ্রদ্ধাঞ্জলি

ডিসেম্বর থেকে আগামী জুনের মধ্যে নির্বাচন: প্রধান উপদেষ্টা

হাসিনা পৃথিবীর সকল নিষ্ঠুরতা ছাড়িয়ে গেছেন: প্রধান উপদেষ্টা

সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর রপ্তানি ১৩ শতাংশ বেড়েছে: ড. ইউনূস

অর্থনীতির সূচকগুলো ইতিবাচক ধারায় ফিরতে শুরু করছে: ড. ইউনূস

রমজান ও ঈদে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল জিনিসপত্রের দামের লাগাম টেনে ধরা

বৈষম্যহীন দেশ গড়তে অভ্যুত্থানের সুযোগ কাজে লাগাতে চাই

ইসরাইলি বিমানবন্দর ও মার্কিন রণতরীতে ইয়েমেনি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

আলোচনা সাপেক্ষে সাত দিন পর্যন্ত ছুটি পাবেন পোশাকশ্রমিকরা

ভারতের বিপক্ষে একাদশে অভিষিক্ত হামজা চৌধুরী, নেই জামাল ভূঁইয়া

দেশমাতৃকার কল্যাণে সেনাবাহিনী সবসময় পাশে থাকবে: সেনাপ্রধান

চুয়াডাঙ্গায় জমেছে ঈদের বেচাকেনা, বিপনী বিতানে বাহারি পোশাক

ঈদ ছুটি নিয়ে নোয়াবকে ডিইউজের চিঠি

বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে প্রস্তুত জাতীয় স্মৃতিসৌধ