ই-পেপার রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও ইসরায়েলের বেপরোয়া গনহত্যা

রায়হান আহমেদ তপাদার:
০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:২০

ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি হত্যার সাম্প্রতিক এ ঘটনার দায় শুধু হামাস ও নেতানিয়াহু সরকারের নয়, রক্তের দাগ পশ্চিমাদের হাতেও লেগে রয়েছে। তবে এটা সত্যি যে, ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা ৭ অক্টোবর গাজা উপত্যকার সন্নিকটে ইসরায়েলি বসতিতে হামলা চালিয়েছেন। কিন্তু এ হামলা নির্দিষ্ট কোনো জায়গা থেকে শুরু হয়নি, কিংবা আগে থেকে সতর্কতাও ছিল না। ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা কোনো প্ররোচনা দেয়নি। কিন্তু সেটা কতটুকু বিশ্বাসযোগ্য তা কেউই বলতে পারে না। পশ্চিমা দেশগুলোর সরকারগুলো ভালো করেই জানে, গাজার ফিলিস্তিনিদের প্রকৃতপক্ষে কতটা প্ররোচিত করা হয়েছে। কেননা এসব সরকার দশকের পর দশক ধরে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েল যে জাতিগত শুদ্ধি অভিযান চালিয়ে আসছে, তাতে সমর্থন দিয়ে আসছে। ফিলিস্তিনিদের তাদের জন্মভূমি থেকে বিতাড়ন এবং বাকি যারা আছেন, তাদের বসতিতে বন্দি করে রাখার ঘটনায় পশ্চিমা সরকারগুলো সমর্থন দিয়ে আসছে। ইসরায়েলের এসব অপরাধ সম্পর্কে ঠিক সময়েই জানতে পেরেছে পশ্চিমা সরকারগুলো। নিজেদের দূতাবাসের কর্মকর্তাদের গোপন তারবার্তায় এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অসংখ্য প্রতিবেদনে তারা জাতিবিদ্বেষী রাষ্ট্র ইসরায়েলের অপরাধের কথা জেনে আসছে।এখন পর্যন্ত পশ্চিমা রাজনীতিবিদরা ইসরায়েলিদের আগ্রাসন বন্ধে কিছুই করেনি। নেতৃস্থানীয় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী সংস্থা গত বছরের ডিসেম্বর মাসে তিনটি পৃথক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে গাজায় ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর ইসরায়েলি গণহত্যার ভয়ানক চিত্র ফুটে উঠেছে।

আরও সঠিকভাবে বললে, এতদিন যেটা দৃশ্যত স্পষ্ট ছিল, এখন তারা নিশ্চিত করেছে, গত ১৪ মাস ধরে ইসরায়েল সামরিক অস্ত্র দিয়ে নির্বিচারে হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করছে। একই সময়ে অনাহারে রেখে ধীরে ধীরে তাদের মৃত্যুমুখে পতিত করেছে। এমনকি তাদের চিকিৎসা পর্যন্ত করাতে দেয়নি।গ্যাস চেম্বারের বিষ দিয়ে কিংবা ছুরি দিয়ে গণহত্যা সংঘটিত হতে পারে। অথবা ২০০০ পাউন্ড বোমা ফেলে কিংবা সাহায্য বন্ধ করার মাধ্যমেও গণহত্যা ঘটানো যায়। গণহত্যা যেভাবেই ঘটুক, এর উদ্দেশ্য একটি জনগোষ্ঠীকে নির্মূল করা। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও মেডিসিনস সানস ফ্রন্টিয়ার্স (এমএসএফ) এই তিনটি সংস্থা এ ব্যাপারে একমত, এই নির্মূলের চেষ্টাই করছে ইসরায়েল। দেশটি তার এই অভিপ্রায় গোপন রাখেনি এবং এই সেটে তার কর্মকাণ্ডের মাধ্যমেই নিশ্চিত হয়েছে। এ বিষয়টি যারা ইচ্ছাকৃত অন্ধ, তারা এখনও অগ্রাহ্য করছে। যেমন পশ্চিমা রাজনীতিবিদ এবং তাদের দোসর সংবাদমাধ্যম। অগ্রাহ্য করার চেয়েও ভয়ানক বিষয় হলো, তারা মানবতার বিরুদ্ধে চূড়ান্ত এই অপরাধে ইসরায়েলকে প্রয়োজনীয় অস্ত্রশস্ত্র, বুদ্ধিমত্তা ও কূটনৈতিকভাবে সাহায্য করছে। গত বছরের শেষ সপ্তাহে এমএসএফ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যার শিরোনাম:'গাজায় মৃত্যুফাঁদে যে জীবন’। সংস্থাটি পর্যবেক্ষণে বলেছে, ‘ইসরায়েলি বাহিনীর সহিংসতা এমন মাত্রায় শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে; চিকিৎসা দিয়ে ভালো করা কঠিন। ১৭ বছরের দীর্ঘ অবরোধ দিয়ে ইসরায়েল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে।’এমএসএফের ভাষায়- ইসরায়েল যদি আজ এই আক্রমণ বন্ধ করে, ধ্বংসের মাত্রা বিবেচনায় এটা চিন্তা করাও কঠিন যে, গাজাবাসীর তা সারাতে ঠিক কত সময় লাগবে।

এমএসএফের ১৮৫ পাতার পর্যবেক্ষণের পরই হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদন প্রকাশ হয়, যেখানে সংস্থাটি এই উপসংহারে পৌঁছেছে, ইসরায়েল গণহত্যামূলক কাজ করছে। একটি নীতিকে তারা গুরুত্ব দিচ্ছে যে, ইসরায়েল গাজাবাসীকে পানির অধিকার থেকে বঞ্চিত করার পদ্ধতিগত চেষ্টা চালিয়েছে। উদ্দেশ্যমূলক এই কর্মকাণ্ডের সাহায্যে যে গণমৃত্যু ঘটেছে, সেটা জেনোসাইড। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মধ্যপ্রাচ্যের ডিরেক্টর লামা ফাকিহ বলেছেন, তাদের গবেষণায় প্রমাণিত, ইসরায়েল ইচ্ছাকৃত গাজাবাসীকে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় পানি না দিয়ে হত্যা করছে। ইসরায়েল চারটি পদক্ষেপের মাধ্যমে সমন্বিতভাবে এটি করেছে। তারা গাজার বাইরে থেকে পানি সরবরাহকারী পাইপলাইন বন্ধ করেছে। এর পর গাজার নিজস্ব কূপ ও প্লান্ট থেকে পাম্পের মাধ্যমে যাতে পানি সরবরাহ করতে না পারে, সে জন্য বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেয়। এমনকি তারা সৌর প্যানেল ধ্বংস করে, যা ছিল বিদ্যুতের বিকল্প ব্যবস্থা ও সর্বশেষ বিদ্যুৎ মেরামতকারী ক্রু ও পানি সরবরাহে চেষ্টাকারী সংস্থার কর্মীদেরও তারা হত্যা করে। ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিন-বিষয়ক এইচআরডব্লিউর ভারপ্রাপ্ত পরিচালক বিল ভ্যান এসভেল্ড বলেছেন,'গাজাবাসী যাতে পানি না পায়, সে জন্য ‘সর্বতোভাবে পানি পেতে বাধা দেওয়ার নীতি তারা গ্রহণ করে।’ তিনি যোগ করেছেন, তার মানে ইসরায়েল খুব স্পষ্টভাবে জাতিগত নির্মূলের চেষ্টা করেছে। এইচআরডব্লিউর কণ্ঠই প্রতিধ্বনিত হয়েছে বিশ্বের খ্যাতিমান আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বিস্তৃত প্রতিবেদনে। ডিসেম্বরের শুরুতে প্রকাশিত ২৯৬ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে অ্যামনেস্টি এই উপসংহারে পৌঁছেছে, ইসরায়েল গাজায় বেপরোয়াভাবে ক্রমাগত গণহত্যা চালাচ্ছে। সংস্থাটি ছবির মাধ্যমে একে আরও সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছে।

অ্যামনেস্টি এই গবেষণা করেছিল জুলাই মাসে তথা প্রায় পাঁচ মাস আগে। এর পরও ইসরায়েল উত্তর গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ আরও জোরদার করেছে, যাতে সেখানকার নাগরিকদের জোর করে বের করে দেওয়া যায়। এর পরও অ্যামনেস্টি তাদের আচরণের ধরন বর্ণনায় লিখেছে, ইসরায়েল পরিকল্পিতভাবে ত্রাণ সাহায্য ও বিদ্যুৎ সরবরাহে বাধা দেয় এবং ছিটমহলের মতো ছোট্ট পরিসরের গাজায় এত বেশি বিস্ফোরক দ্রব্যের বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে, যা দুটির বেশি পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণতুল্য। যে কারণে গাজার পানি, পয়োনিষ্কাশন, খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ধসে পড়ে। আক্রমণের মাত্রা এত বেশি ছিল, সংস্থাটি এটি বিশেষভাবে উল্লেখ করেছে, যেখানে একুশ শতকের অন্য কোনো সংঘাতের তুলনায় এর গতি, মৃত্যু ও ধ্বংসযজ্ঞের তুলনাই চলে না। অ্যামনেস্টি বলেছে, গত মে মাসে রাফায় ইসরায়েল নিরাপদ জোনে যে ধ্বংসযজ্ঞ চালায়, তাতেই এর জেনোসাইডের অভিপ্রায় প্রমাণ হয়ে যায়। এমনকি ইসরায়েলকে তখন বিশ্বের সর্বোচ্চ আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসও (আইসিজে) রাফায় আক্রমণ করার জন্য সতর্ক করেছিল; কিন্তু ইসরায়েল তা মানেনি। মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি প্যাক আমেরিকানা (দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর আমেরিকার নেতৃত্বে করা শান্তিচুক্তি) মেনে নিতে বাধ্য করতে চোখরাঙানি দেয়া বন্ধ করাতে হবে। ফিলিস্তিনিরা নীরবে তাদের সব দুর্ভোগ সহ্য করে যাবেন, সেটাই পশ্চিমারা প্রত্যাশা করে। এর কারণ হলো, ফিলিস্তিনিরা যখন চিৎকার করেন, তখন পশ্চিমা দেশগুলোর জনসাধারণের সামনে এটা খোলাসা হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয় যে পশ্চিমা নেতাদের বলা নিয়মভিত্তিক বিশ্বব্যবস্থা আসলে কতটা ধাপ্পাবাজি। এটাই এখন বিবেচ্য বিষয়।

বিভিন্ন রাজনৈতিক ভাষ্যকার ও নেতারা ইতোমধ্যেই ইসরায়েলকে তার পশ্চিমা মিত্রদের জন্য বোঝা হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেছেন, ইসরায়েলের নেতারা তাদের পথ হারিয়েছেন। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কী ইসরায়েলকে দুর্বৃত্ত রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা দেয়ার সময় এখনো আসেনি? কোনো দেশের গায়ে ‘দুর্বৃত্ত রাষ্ট্র’-এর তকমা সেঁটে দেয়ার একটি জঘন্য ইতিহাস রয়েছে। যেসব দেশকে পশ্চিমারা তাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে পড়া হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে এসেছে, সেসব দেশকে ঘায়েল করতেই এই শব্দবন্ধকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের এই নিরঙ্কুশ প্রশ্রয় ও মদদের কারণে ইসরায়েল সত্যিকারের দুর্বৃত্ত রাষ্ট্র হয়ে উঠেছে। তবে কানাডা, নেদারল্যান্ডস, জাপান, স্পেন ও বেলজিয়ামের মতো দেশ ইসরায়েলের এই আচরণের কারণে তেল আবিবের কাছে অস্ত্র বিক্রি স্থগিত করেছে। এ থেকে বোঝা যায়, ইসরায়েলের দুর্বৃত্তায়নকে প্রভাবশালী দেশগুলো স্বীকার করতে শুরু করেছে। মনে হচ্ছে, যে কারও পক্ষে আশা করা সম্ভব, খুব শিগগিরই ইসরায়েল তার মিত্রদের কাছে, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অসহনীয় বোঝা হয়ে পড়বে এবং এটিই ফিলিস্তিনের মুক্তির পথ খুলে দেবে।

লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট, যুক্তরাজ্য।

আমার বার্তা/জেএইচ

হাদির ওপর হামলা, শান্তির পথে কাঁটা ছড়াচ্ছে কারা?

বহু প্রতীক্ষা ছিল। নতুন দিনের স্বপ্ন দেখছিল দেশ। নির্বাচন কমিশন ‘তফসিল’ ঘোষণা করল। নির্বাচনের ট্রেন

বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব এবং বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট

জনগণের মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা একটি জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রের অপরিহার্য দায়িত্ব। তবে, বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান

এনটিআরসিএ নামকরণের সার্থকতা যথেষ্ট যৌক্তিক

NTRCA এর পূর্নাঙ্গ রূপ N= Non, T= Trusted, R= Researches and, C= Corrupted,  A= Authority.

ভূমিকম্প কেন হয় এবং নরসিংদী এর কেন্দ্র কেন? এ নিয়ে কিছু কথা

ভূমিকম্প সৃষ্টি হয় ভূত্বকের গভীরে। ভূমিকম্প যেখানে সৃষ্টি হয়, তাকে বলা হয় ভূমিকম্পের কেন্দ্রবিন্দু। কেন্দ্রবিন্দু
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সুদানে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী ঘাঁটিতে হামলায় ৬ বাংলাদেশি নিহত

স্বর্ণ চুরির মিথ্যা অভিযোগে পরিবারের ওপর নির্যাতন

বারবার পাল্টাচ্ছে অবস্থান, হাদির হামলাকারীকে ধরতে পুলিশের অভিযান

আফগানিস্তানকে হারিয়ে এশিয়া কাপে শুভ সূচনা বাংলাদেশের

বিপিএল খেলতে আসছেন মঈন আলি

হাদিকে গুলির ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ কর্মী

সন্ত্রাস দমনে চালু হচ্ছে ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

নির্বাচনকে বানচাল করতে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র চলছে: মনিরুল হক

বগুড়ায় শিশু ধর্ষণের আসামি জামিনে মুক্ত, মামলা তুলে নিতে হুমকি

প্রায় ১২ ঘণ্টা পর কেরানীগঞ্জের সেই ভবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে

ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় একদিন পেরিয়ে গেলেও হয়নি কোনো মামলা

ওসমান হাদির ওপর হামলা নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে না: নির্বাচন কমিশনার

মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশ আমলাতান্ত্রিক দখলদারিত্বে জিম্মি

যেকোনও মূল্যে দেশে জাতীয় নির্বাচন হতে হবে: তারেক রহমান

চরম হতাশার মুহূর্তে আল্লাহর ওপর ভরসা রাখার গুরুত্ব

মোবাইলে কথা বলতে বলতেই ট্রেনের ধাক্কায় প্রাণ গেল যুবকের

যমুনা অয়েলের তেল চুরি সিন্ডিকেট প্রধান হেলালের প্রধান সেনাপতি এয়াকুব গ্রেপ্তার

২০২৬ সালে বিশ্ববাজারে সোনার দাম বাড়াতে পারে ৪,৯০০ ডলারে

অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার কমাতে জানুয়ারিতে সচেতনতামূলক কর্মসূচি শুরু

ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধের ঘটনায় ঢাবি সাদা দলের নিন্দা প্রকাশ