গণমানুষের ৫ দফা দাবি মেনে না নিলে, অন্তর্বর্তী সরকারের কোন কোন উপদেষ্টা একটি রাজনৈতিক দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করছে– তাদের নাম জনসম্মুখে প্রকাশ করে দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামির নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
তিনি বলেন, হাজার হাজার মানুষ সড়কে নেমে শান্তিপূর্ণভাবে তাদের দাবি জানাচ্ছে। অথচ যদি সরকার এখনও জনগণের ভাষা না বোঝে, তাহলে জনগণ সেই ভাষায়ই নিজেদের দাবি আদায় করবে, যেটা সরকার বুঝতে বাধ্য হবে।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে গাবতলী পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার জুড়ে আয়োজিত জামায়াতে ইসলামির বিশাল মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
ডা. তাহের বলেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রতিষ্ঠা, পিআর পদ্ধতিতে সংসদের উভয় কক্ষের নির্বাচন, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা, ফ্যাসিস্ট সরকারের জুলুম-নির্যাতন ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা– এই ৫ দফাই আজ গণমানুষের মুক্তির দাবি।
তিনি সতর্ক করে বলেন, জামায়াতে ইসলামি শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিশ্বাসী। তবে সরকার যদি রাজপথ উত্তপ্ত করতে চায়, তাহলে আমরাও প্রস্তুত। সরকারকে মনে রাখতে হবে, এই দেশে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো আর কোনো নির্বাচন হতে পারবে না। জনগণ এখন সজাগ, সংগঠিত।
গণভোট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গণভোট জাতীয় নির্বাচনের টেস্ট ম্যাচ। নভেম্বরে গণভোট এবং ফেব্রুয়ারিতে জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে। যারা গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন একদিনে করতে চায়, তাদের উদ্দেশ্য খারাপ– তারা চায়, পুরোনো পদ্ধতিতে ভোট চুরি আর কেন্দ্র দখল অব্যাহত থাকুক।
তিনি আরও বলেন, যারা জুলাই সনের আইনি ভিত্তি চায় না, তারা যুক্তি দেয়– গণভোটে সমস্যা হলে জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব পড়বে। কিন্তু গণভোটেই তো চিহ্নিত হবে, কারা সমস্যা সৃষ্টি করে। তাই জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারের জন্যও গণভোট আগে হওয়া জরুরি।
প্রশাসনে দলীয় নিয়োগ প্রসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করে ডা. তাহের বলেন, আমাদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল যে জনপ্রশাসন সচিব হিসেবে কোনো দলের অনুগত ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়া হবে না। কিন্তু বাস্তবে যাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তিনি একজন দুর্নীতিগ্রস্ত ও দলীয় আনুগত্যে অন্ধ ব্যক্তি।
তিনি প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে বলেন, আপনি নোবেল বিজয়ী হিসেবে বিশ্বে সম্মানিত। কিন্তু যারা আপনাকে ব্যবহার করে বিতর্কিত করছে, তাদের থেকে সতর্ক থাকুন। আপনি যদি তাদের সরিয়ে না দেন, আমরা জাতির সামনে তাদের মুখোশ উন্মোচন করব। প্রয়োজনে তাদের নাম-তালিকাও দিতে প্রস্তুত আছি।
ডা. তাহের আরও বলেন, আপনি যদি জাতিকে শান্তি ও স্থিতি উপহার দিতে চান, তাহলে ৫ দফা দাবি মেনে নিন। এতে শুধু জামায়াতে ইসলামির নয়, গোটা জাতির মঙ্গল হবে।
তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামি ব্যক্তি বা পরিবারের রাজনীতি করে না, করে গণমানুষের কল্যাণের রাজনীতি। যারা জনগণের ভোটের আগেই ক্ষমতার স্বপ্ন দেখে, তাদের পতন শুরু হয়ে গেছে। জনগণ এখন আর প্রতারণামূলক রাজনীতি মেনে নেবে না।
মানববন্ধনে হাজারো মানুষ ব্যানার-ফেস্টুন হাতে উপস্থিত হয়ে ৫ দফা দাবি বাস্তবায়নের আহ্বান জানান। তাদের দাবি—জুলাই সনদের বাস্তবায়নের মাধ্যমেই দেশে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও জন অধিকার ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
আমার বার্তা/এমই