
যমুনা অয়েলের তেল চোর সিন্ডিকেটের সেকেন্ড ইন কমান্ড সিবিএ নেতা মুহাম্মদ এয়াকুব গ্রেফতার হয় ১২ ডিসেম্বর রাত আড়াইটায়৷ যদিও মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তাকে চান্দগাও থানায় হস্তান্তর করে ১৪ ডিসেম্বর ভোর বেলা। রোববার তাকে জুলাইয়ের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উপর হামলার অভিযোগে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের একটা মামলায় চালান দেয়া হয় । আদালতে নির্দেশে এয়াকুবকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়৷
অনুসন্ধানে জানা গেছে শুক্রবার রাত তিনটা থেকে রোববার ভোর পর্যন্ত এয়াকুবকে সাথে নিয়ে যমুনা অয়েলের বিভিন্ন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বাড়িতে অভিযান চালায় চট্রগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি টীম । প্রথমে অভিযান চালানো হয় যমুনা অয়েলের সদ্য বিদায়ী ডিজিএম অপারেশন, চট্রগ্রাম মহানগর যুবলীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি মহিউদ্দিন বাচ্চুর ছোট বোনের জামাই হেলাল উদ্দিনের কাতলগন্জ বাড়িতে । অবশ্য হেলাল নিজেও যুবলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত৷ তবে তিনি এয়াকুবের গ্রেফতারের খবরটি মুহূর্তের মধ্যে জেনে ফেলায়, অভিযানের আগেই বাসা ছেড়ে পালিয়ে যান ৷ এরপর থেকেই আত্মগোপনে চলে গেছে এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও নিষিদ্ধ সংগঠন যুবলীগ নেতা হেলাল উদ্দিন। বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে যে কোন সময় তিনি কানাডা পাড়ি জমাতে পারেন৷
মাত্র পনের দিন আগে অর্থ্যাৎ ৩০ নবেম্বর যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ডিজিএম অপারেশন, তেল চোর সিন্ডিকেট প্রধান হেলাল উদ্দিন চাকরি থেকে অবসরে চলে যায় । বিগত আওয়ামিলীগ সরকারের আমলে হেলাল, এয়াকুব, তেল টুটুলের নেতৃত্বেই হাজার হাজার কোটি টাকার তেল চুরির ঘটনা সংঘটিত হয়েছে প্রতিষ্ঠানটিতে। শুধু তেল চুরি করে শতশত কোটি টাকার মালিক সিন্ডিকেটের প্রত্যেক সদস্য। সিন্ডিকেট প্রধান হেলাল উদ্দিন চাকরী জীবনে মালিক হয়েছে শত কোটি টাকার । ইতিমধ্যে দুদকও তার অবৈধ সম্পত্তির খোজে মাঠে নেমেছে। তবে দুদককে তিনি ম্যানেজ করে ফেলেছে, এমন খবরও শোনা যাচ্ছে। চট্টগ্রাম আগ্রাবাদ শাখার সিটি ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাষ্ট ব্যাংক, ট্রাষ্ট ব্যাংক , ইস্টার্ন ব্যাংক, এইচ এস বি সি ও আইএফ সি ব্যাংক সহ একাধিক ব্যাংকে হেলাল উদ্দিন এবং তার স্ত্রীর নামে রয়েছে একাউন্ট। গত এক বছরের তিনি এবং তার স্ত্রী এই ব্যাংকগুলোর একাউন্ট থেকে বড় অংকের অর্থ উত্তোলন করেছে । উত্তোলনকৃত অধিকাংশ টাকাই পাঁচার হয়েছে ভারতে পলাতক তার সম্বন্ধি সাবেক এমপি ও যুবলীগ নেতা মহিউদ্দিন বাচ্চু এবং কানাডা প্রবাসী তার ছেলে মেয়ের কাছে ।
প্রতিষ্ঠানটিতে হেলাল উদ্দিন চাকরি করে গেছে বিরাট ক্ষমতাধর হিসেবে। দীর্ঘ চাকরী জীবনে তার কোন বদলী নেই। ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠানটিতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান তিনি। সহকারী অফিসার পদে চাকরী স্থায়ী হয় ১৯৯৭ সালের ১লা জানুয়ারী। প্রথমে পোষ্টিং পায় মেইল ইনস্টলেশন পতেঙ্গা টার্মিনাল অফিসের বাল্ক সেকশনে। মুলত যমুনা অয়েলের সবচেয়ে লোভনীয় পোষ্টিং হলো এই সেকশন। বেশী পরিমান তেল চুরি হয় এই সেকশন থেকেই। শুরু থেকে এই পর্যন্ত কখনো পতেঙ্গার টারমিনাল অফিস কিংবা আগ্রাবাদ প্রধান কার্যালয়, ঘুরে ফিরে এই দুই অফিসেই চাকরি করে গেল হেলাল উদ্দিন । অবশ্য একবার বগুড়ায় বদলির অর্ডার হয়েছিল, তবে মুহূর্তের মধ্যে তার সম্বন্ধির ক্ষমতার দাপটে সেই আদেশ স্থগিত হয়ে গেছে। অবশ্য কিছু দিনের জন্য অডিট এ আগ্রাবাদ শাখায় কর্মরত ছিল, কিন্তু ফের এজিএম টার্মিনাল অফিসে পদায়ন করা হয়। ডিজিএম পদে পদোন্নতি পরেও একই সাথে পতেঙ্গা টার্মিনাল অফিসের এজিএম টার্মিনাল পদে দায়িত্ব পালন করছে ।
চাকরি জীবনে মালিক হয়েছে নুন্যতম পাঁচশ কোটি টাকার। নিজে ব্যবহার করে প্রিমিও মডেলের প্রাইভেট কার, যার নাম্বার চট্টগ্রাম মেট্রো গ ১২- ৫৬১০ এবং স্ত্রীর জন্য আছে Havel মডেলের একটি জীপ। কানাডায় রেখে পড়াশোনা করিয়েছে ছেলেকে, বানিয়েছে পাইলট। ছেলের টিউশনি ফি নামে অনেক আগেই কানাডাতে শত শত কোটি টাকা পাঁচার করার অভিযোগ উঠেছে। সেখানে আছে নিজস্ব ফ্ল্যাটও। বর্তমানে সেই ফ্ল্যাটে থাকছে তার ছেলে ও মেয়ে। কিনেছে মালয়েশিয়াতেও ফ্লাট, সেই ফ্ল্যাটের বর্তমানে ভাড়াটিয়া সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত আওয়ামীলীগ নেতা আক্তারুজ্জামান বাবুর সহোদর বদিরুজ্জামানের ছেলে। চট্টগ্রামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণপুর্ন পাঁচলাইশ এলাকার আনিকা কমিউনিটি সেন্টারের পাশে ৭৭৫/৮৮৫ কাতলগন্জ আসিফ হাউজ নামে পাচ তলা ভবনটির মালিক তিনি । সাত আট বছর আগে পাঁচ কাঠার জায়গার উপর এই বাড়ীটি ক্রয় করেন তিনি । যার বর্তমান বাজার মুল্য দশ কোটি টাকারও বেশি।সম্পাদিত দলিল রেজেষ্ট্রিও হেলাল উদ্দিনের নিজের নামে। বাড়িটির নাম দেয়া হয় তার ছেলে আসিফের নামে ( আসিফ হাউজ) । বছর পাচেক আগে একই এলাকাতে কাতালগন্জ আবাসিক এলাকার ৪ নং রোডের কালীবাড়ির পাশে 5th কনভেনশন হলের বিপরিত পাশে আট শতাংশ জায়গায় উপর পাঁচ কোটি বিশ লাখ টাকায় আরেকটি পাঁচতলা বাড়ি কিনেন । বছর দেড়েক আগে সেই বাড়িটি ভেঙে দশতলা ভবন নির্মান কাজে হাত দেয় । অবশ্য গত বছর ৫ আগষ্ট ২০২৪ সালে দেশের পটপরিবর্তনের পর ভবনের নির্মাণ কাজ সাময়িক বন্ধ ছিল । ইতিমধ্যে ভবনের কাজ ফের শুরু হয়েছে। রাউজানের সুলতানপুর নিজ গ্রামে নিজেরটা ছাড়াও একই ডিজাইনে পাঁচ ভাইকে পাঁচটি বাড়ি করে দিয়েছে। নামে বেনামে কিনে রেখেছে শত কোটি টাকার সম্পত্তি।

