নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ এবং নির্বাচন কমিশন সচিবালয় (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ জারি করেছে সরকার। রোববার (৫ অক্টোবর) আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ দুটি অধ্যাদেশের গেজেট প্রকাশ করেছে। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন পরিচালনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
নির্বাচন কর্মকর্তাদের শাস্তি ও ইসির প্রাধান্য
‘নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এ নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা ‘নির্বাচন কর্মকর্তাদের’ মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। দায়িত্বে অবহেলা, শাস্তির পরিধি ও কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিতের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এই অধ্যাদেশের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো হলো–
নির্বাচন কর্মকর্তা কারা : নির্বাচন সংক্রান্ত কোনো দায়িত্ব বা কর্মে নিযুক্ত কোনো ব্যক্তি, নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনো ব্যক্তি, রিটার্নিং অফিসার, ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তাও (যেমন- প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার বা আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্বে নিয়োজিত আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য)।
অসদাচরণ : কোনো নির্বাচন কর্মকর্তা ইচ্ছাকৃতভাবে কমিশন বা রিটার্নিং অফিসারের আদেশ বা নির্দেশ পালনে ব্যর্থ হলে বা অস্বীকৃতি জানালে বা নির্বাচন সংক্রান্ত কোনো আইনের বিধান ইচ্ছাকৃতভাবে লঙ্ঘন করলে বা কর্তব্যে অবহেলা করলে তা অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হবে।
শাস্তির পরিধি : অসদাচরণের জন্য নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ তাকে চাকরি থেকে অপসারণ বা বরখাস্ত করতে পারবে, বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান করতে পারবে, পদাবনতি করতে পারবে অথবা তার পদোন্নতি বা বেতন বৃদ্ধি অনধিক ২ বছরের জন্য স্থগিত রাখতে পারবে।
কমিশনের ক্ষমতা : অসদাচরণ করলে কমিশন বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, ক্ষেত্রমতো, কমিশনের সম্মতিক্রমে রিটার্নিং অফিসার তাকে, তার বিরুদ্ধে শৃঙ্খলামূলক কার্যধারা গ্রহণ সাপেক্ষে, অনধিক ২ মাসের জন্য সাময়িকভাবে চাকরি থেকে বরখাস্তের আদেশ দিতে পারবেন।
নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের বাধ্যবাধকতা : শৃঙ্খলামূলক কার্যধারা গ্রহণের জন্য কমিশন প্রস্তাব করলে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ এক মাসের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করবে এবং কমিশনকে অবহিত করবে।
কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড : এ বিধান লঙ্ঘন করলে তা হবে একটি অপরাধ। যার জন্য তিনি অনধিক এক বছর কারাদণ্ডে বা অনধিক এক লাখ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন। কমিশনের আদেশ প্রতিপালন না করলে তিনি অনধিক পাঁচ বছর এবং অন্যূন এক বছরের কারাদণ্ডে বা অনধিক ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয়দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।
মতবিরোধে ইসির সিদ্ধান্ত : সরকার ও কমিশনের মধ্যে এ ধারার কোনো বিধান সম্পর্কে ভিন্নমত দেখা দিলে কমিশনের সিদ্ধান্তই প্রাধান্য পাবে।
আইন সংশোধনের ফলে আগামীতে ভোটে অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পথ প্রশস্ত হলো। সবশেষ ২০২২ সালের অক্টোবরে গাইবান্ধা-৫ উপ-নির্বাচনের পর ভোটে অনিয়মে সম্পৃক্তদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি তৎকালীন ইসি।
ইসি সার্ভিস চালুর অধ্যাদেশ
অন্যদিকে, ‘নির্বাচন কমিশন সচিবালয় (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারির মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগের জন্য ‘নির্বাচন কমিশন সার্ভিস’ নামে আলাদা একটি সার্ভিস রাখার বিধান করা হয়েছে। এর ফলে ইসি কর্মকর্তাদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হলো। সংশোধিত আইন কার্যকর হলে ইসি সচিবালয়ের নিজস্ব কর্মকর্তারাও পদোন্নতি পেয়ে সচিব হওয়ার সুযোগ পাবেন।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন, ২০০৯ এর সংশোধনীতে বলা হয়েছে, ‘নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগের জন্য নির্বাচন কমিশন সার্ভিস নামে একটি সার্ভিস থাকিবে।’
এ দুটি অধ্যাদেশ জারি হওয়ায় নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা ও স্বাধীনতা আরও জোরদার হলো বলে মনে করছেন ইসি কর্মকর্তারা।
আমার বার্তা/জেএইচ