
জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে রায়ের তারিখ ঘোষণাকে ঘিরে রাজধানী ঢাকায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়, সরকারি স্থাপনা ও প্রবেশপথে কঠোর নজরদারি চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সেনাবাহিনী, বিজিবি, ডিএমপি ও এপিবিএনের সদস্যরা একযোগে দায়িত্ব পালন করছেন।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সকাল থেকেই ঢাকার বিভিন্ন সড়কে নিরাপত্তা বাহিনীর টহল দেখা যায়। শাহবাগ, ফার্মগেট, বাংলামোটর, মহাখালী, গাবতলী ও মিরপুরসহ প্রধান এলাকায় বিজিবির সাঁজোয়া যান মোতায়েন করা হয়েছে।
ডিএমপি জানায়, রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে নিষিদ্ধ দল আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য পাল্টা কর্মসূচি ও সহিংসতা প্রতিরোধে বিশেষ নিরাপত্তা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এজন্য রাজধানীতে প্রায় ১৭ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছে, সঙ্গে মাঠে আছে সেনাবাহিনী ও বিজিবির সদস্যরাও।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রগুলো জানায়, বুধবার রাত থেকেই ঢাকায় প্রবেশপথগুলোয় কড়া তল্লাশি শুরু হয়। গাবতলী, যাত্রাবাড়ী, সাইনবোর্ড, মহাখালী ও আব্দুল্লাহপুরে বসানো হয়েছে বিশেষ চেকপোস্ট। গণপরিবহন ও সন্দেহভাজন যাত্রীদের তল্লাশির পাশাপাশি আবাসিক হোটেল, গেস্ট হাউস ও মেসেও অভিযান চালানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালেও সেই কার্যক্রম অব্যাহত থাকে। হাইকোর্ট, শাহবাগ ও বিমানবন্দর এলাকায় কড়া তল্লাশি চলছে। বিমানবন্দরে শুধু যাত্রীদেরই প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে, অন্যদের গাড়ি থেকে নামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
সকালে যান চলাচল ছিল স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা কম। তবু অফিসগামী মানুষ ও প্রয়োজনীয় যানবাহন চলাচল করেছে। বিভিন্ন মোড়ে বিজিবি ও পুলিশের যৌথ টহল দেখা গেছে। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড় ও আশপাশে স্থাপন করা হয়েছে অতিরিক্ত চেকপোস্ট।
প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন ‘যমুনা’র আশপাশে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে; সেই পথে যেতে চাওয়া গাড়িগুলোকে বিকল্প পথে ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। রামপুরা ও সবুজবাগ এলাকাতেও চলছে তল্লাশি কার্যক্রম।
অন্যদিকে সায়েদাবাদ ও গাবতলী টার্মিনাল থেকে সীমিত সংখ্যক দূরপাল্লার বাস ছাড়ছে। নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে অনেক পরিবহন মালিক গাড়ি না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ফলে যাত্রীদের ভোগান্তি বেড়েছে।
এক পরিবহন মালিক বলেন, “বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনার পর এখন রাস্তায় গাড়ি নামাতে ভয় লাগে। যাত্রীদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলতে চাই না।”
ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র তালেবুর রহমান জানান, “রাজধানীতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রতিটি এলাকা ও প্রবেশপথে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে আছে। গুজব বা উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তিনি নগরবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “পরিস্থিতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং আমরা সব সময় সতর্ক আছি।”
আমার বার্তা/জেএইচ

