ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে গত কয়েক বছর ধরে চলছে তিতাস নদীর তীব্র ভাঙন। বাড়িঘর, আবাদি জমি ও অন্যান্য স্থাপনা নদীগর্ভে ভেঙে যাচ্ছে। গত কয়েক দিনে উজানচর, কৃষ্ণনগর, বুধাইরকান্দি, রাধানগর গ্রামসহ বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়াও হুমকিতে রয়েছে আরো কয়েক শতাধিক ঘরবাড়ি ও বেশ কিছু স্থাপনা।
আর এ নদী ভাঙন রোধে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড বালুর বস্তা ও জিও ব্যাগ ফেলে দ্রুত কাজ করলে গ্রামগুলো রক্ষা হবে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। ভাঙন কবলিত মানুষ তাদের বসতবাড়ি রক্ষায় স্থায়ী প্রতিরোধ ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছেন।সরেজমিন গিয়ে ঘুরে দেখা যায়, উজানচর ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর, বুধাইরকান্দি, রাধানগর, কালিকাপুর গ্রামের বাড়ি ঘর হুমকিতে আছে। তবে এর মধ্যে কৃষ্ণনগর গ্রামের নদী ভাঙ্গনটি ভয়াবহ রূপ ধারন করেছে।
এ বিষয়ে কথা বললে উজানচর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হামিদ মেম্বার জানান, আওয়ামী লীগের এমপি কে.তাজের ভাগ্নে কাজী জাদিদ আল রহমান জনি (চেয়ারম্যান), আওয়ামী লীগের নেতা সেলিম চেয়ারম্যান গং এই তিতাস নদী থেকে ৬/৭ বছর আগে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করেছে। যার ফলে নদী ভাঙন হয়ে এই এলাকার মানুষ ঘরবাড়ি ছাড়া হচ্ছে। শুধু কৃষ্ণনগর গ্রাম নয় এই ইউনিয়নের আরও কয়েকটি গ্রামেও দেখা দিয়েছে নদী ভাঙ্গন।কৃষ্ণনগর গ্রামের ভুক্তভোগী বাসনা দাস বলেন, আমাদের ৫ শতক জায়গায় ঘরবাড়ি ছিল নদীতে ভেঙে শেষ হয়ে গিয়েছে।এখান থেকে বালু উত্তোলনের কারণে আমাদের বাড়িঘর নদীতে চলে গেছে। সরকার যদি আমাদের সাহায্য না করে তাহলে আমরা কোথায় গিয়ে থাকবো?একই গ্রামের ভুক্তভোগী মিলনী শীল বলেন, নদী আমাদের ঘরবাড়ি কেরে নিলো, আমার আর কিছু রইলো না। আমার মতো আরও মানুষের ঘরবাড়ি নদীতে ভাঙ্গতাছে। উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে লোকজন এসে জায়গায় দেখে গেলো এখনও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না আমরা তিতাস নদীতে স্থায়ীভাবে নদী প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম চাই।উজানচর ইউনিয়নের বিএনপি নেতা বাবুল মিয়া বলেন, এলাকার মানুষ গরিব, তারা মাছ ধরে খায়, তাদের ঘরবাড়ি নদীতে চলে গেছে। তাদের সাহায্য না করলে তাদের পানিতে ভাসতে হবে।স্থানীয় বাসিন্দা আলামিন বলেন, বিগত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে এই নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে এই এলাকার ঘরবাড়ি ভাঙছে। সরকারের কাছে আবেদন করি এই এলাকার গরীব মানুষগুলোর জন্য যেন সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়।কৃষ্ণনগর গ্রামের মো. কাসেমের ভাষ্য, তিতাস নদীর কৃষ্ণনগর গ্রামে ২-৩ বছর যাবত নদীভাঙ্গন ভয়াভহ আকার ধারণ করেছে। অন্য দিকে পরে হলেও এই এলাকায় আগে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফেরদৌস আরা বলেন, প্রতিনিয়ত আমার পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে যোগাযোগ হচ্ছে। এমনিতে এই এলাকার জন্য ৫০ কোটি টাকার একটা প্রকল্প আছে যেটা মন্ত্রণালয়ে আছে। ইতোমধ্যে আমি কয়েকবার গিয়ে ভাঙন দেখে এসেছি। ৩/৪ দিনের মধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নিবে। জেলা প্রশাসক ও আমি সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি।পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মঞ্জুর রহমান বলেন, উজানচর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের পাশে ২০১৮-২০১৯ সালে নদী খননের ফলে তিতাস নদীর ভাঙন দেখা দিয়েছে। আমরা ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ব্যবহার করেছি। কৃষ্ণনগর গ্রামের ভাঙনটি রোধে খুব দ্রুতই পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে পানি উন্নয়ন সার্কেল কুমিল্লা তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) হাসান মাহমুদ জানান, আমাকে সকালে নির্বাহী প্রকৌশলী জানিয়েছে যেহেতু বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ আমি তাকে দ্রুত কাজ করার অনুমতি দিয়েছি।