
দক্ষিণ এশিয়ার শীতের বাজারে যে কয়েকটি মৌসুমি উপাদান নতুন স্বাদ নিয়ে হাজির হয়, তার মধ্যে পানিফল (অন্য নাম: পানি-শিঙাড়া) অন্যতম। দেখতে সাধারণ হলেও এই ফলের ভেতর লুকিয়ে আছে এমন সব পুষ্টি উপাদান, যা শরীরকে দেয় শক্তি, সুরক্ষা এবং হাইড্রেশন বিশেষ করে শীতের মৌসুমে।
স্থানীয় বাজারগুলোতে শীত পড়ে গেলেই টাটকা, মচমচে পানিফলের দেখা মেলে। অনেকেই এটি স্ন্যাকস হিসেবে খেয়ে থাকেন, কিন্তু পুষ্টিবিদদের মতে-এই ফল শুধু নাশতার উপযোগীই নয়, বরং এটি একটি কার্যকর প্রাকৃতিক স্বাস্থ্যরক্ষক।
পানিফলে রয়েছে যেসব পুষ্টি উপাদান
পানিফল সমৃদ্ধ- পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, কপার, ভিটামিন বি-৬, ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
এসব উপাদান শরীরের কোষকে সক্রিয় রাখে, মস্তিষ্ককে সহায়তা করে এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীতের সময় যখন শরীর স্বাভাবিকভাবেই একটু দুর্বল থাকে, পানিফল তখন বাড়তি সুরক্ষা দিতে পারে।
শরীরের জন্য পানিফলের প্রধান ৭ স্বাস্থ্য-উপকার
১. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
পানিফলে থাকা পটাশিয়াম শরীরের সোডিয়াম ব্যালান্স ঠিক রাখে, ফলে রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে। নিয়মিত গ্রহণ হৃদ্যন্ত্রের কর্মক্ষমতা বাড়ায় এবং হাইপারটেনশনের ঝুঁকি কমায়।
২. রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি
ভিটামিন বি-৬ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ঠান্ডা–কাশির মৌসুমে শরীরকে রোগ প্রতিরোধে শক্তিশালী করে। এগুলো প্রদাহ কমাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
৩. হজমতন্ত্রের যত্নে
এই ফলের ফাইবার সমৃদ্ধ গঠন হজম সহজ করে, মলত্যাগ স্বাভাবিক রাখে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। এর প্রাকৃতিক ঠান্ডা ভাব অ্যাসিডিটি কমায় এবং পেটকে আরাম দেয়।
৪. ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
কম ক্যালরি ও বেশি ফাইবারের কারণে পানিফল দীর্ঘসময় পেট ভরা রাখে। এতে অপ্রয়োজনীয় খাওয়া কমে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়।
৫. পানিশূন্যতা দূর করে
নাম ‘শুকনো ফল’ হিসেবে পরিচিত হলেও পানিফলে রয়েছে প্রায় ৭০-৭৫% পানি। ফলে এটি শরীরকে হাইড্রেট রাখে এবং প্রয়োজনীয় ইলেকট্রোলাইট সরবরাহ করে।
৬. ত্বক ও চুলে প্রাণ ফেরায়
পানিফলের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের বার্ধক্য কমায়, ফ্রি–র্যাডিক্যাল থেকে সুরক্ষা দেয় এবং চুলে ভিটামিন-ই এর মাধ্যমে পুষ্টি জোগায়।
৭. ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য তুলনামূলক নিরাপদ
এই ফলের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম হওয়ায় রক্তে শর্করা দ্রুত বাড়ায় না। ডায়াবেটিস রোগীরা পরিমিত মাত্রায় এটি খেতে পারেন।
কীভাবে খাবেন পানিফল?
কাঁচা অবস্থায়
ভালোভাবে ধুয়ে কাঁচা খেলে পুষ্টি সবচেয়ে বেশি বজায় থাকে।
সেদ্ধ বা ভাজা
উভয়ভাবেই এর স্বাদ বাড়ে এবং পুষ্টির বড় অংশ অক্ষত থাকে।
পানিফলের আটা
রমজান কিংবা উপবাস–মৌসুমে এটি গ্লুটেন–ফ্রি একটি জনপ্রিয় শক্তিদায়ী খাবার। এতে রয়েছে ফাইবার ও জটিল কার্বোহাইড্রেট।
কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কি?
সাধারণভাবে পানিফল নিরাপদ, তবে- অতিরিক্ত খেলে ফাইবারের কারণে পেটে গ্যাস বা ফাঁপা ভাব হতে পারে। কাঁচা খেলে অবশ্যই পরিষ্কার পানিতে ভালোভাবে ধুতে হবে। যাদের কিডনির সমস্যা আছে, তারা নিয়মিত খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।
শীতের শুরুতেই বাজারে ভিড় জমায় যে ফল পানিফল-তা শুধু স্বাদেই নয়, স্বাস্থ্যগুণেও অসাধারণ। হাইড্রেশন থেকে শুরু করে হৃদ্স্বাস্থ্য, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কিংবা ওজন নিয়ন্ত্রণ-সব ক্ষেত্রেই এই মৌসুমি ফলটি কার্যকর ভূমিকা রাখে। শীতের সময় নিয়মিত খাদ্যতালিকায় রাখলে শরীর থাকবে সতেজ ও শক্তিতে ভরপুর।

